বিশ্বের শীর্ষ বিলাসী ধনকুবের কে এই ডঃ মুসা বিন শমসের ?

Published on by আদিবা হক

বিশ্বের শীর্ষ বিলাসী ধনকুবের কে এই ডঃ মুসা বিন শমসের
বিশ্বের শীর্ষ বিলাসী ধনকুবের কে এই ডঃ মুসা বিন শমসের

উইকিপিডিয়ার ইংরেজী ও বাংলা সংস্করেণর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশর শীর্ষ ও বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ধনকুবের ডঃ মুসা বিন শমসের ২০১৩ সালেই সাড়ে বারো শত কোটি ডলারের (বাংলা টাকায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা) সম্পদের মালিক হয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষদের অনেকের কালো বর্ণের এ বিচিত্র অপচয়কারী লোক শয়তানের ভাইটির সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নীচে আমি গত ৪ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত 'এবার মুসা বিন শমসেরের সম্পদের খোঁজে দুদক' শীর্ষক সংবাদটি তুলে ধরছি। আশা করি এতে তার ব্যাপারে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যাবে

রোলেক্সের ৫০ লাখ ডলার মূল্যের একমাত্র ঘড়ি তার বাঁ হাতে। ব্যবহৃত ইউনিক মন্ট বাঙ্ক কলমের দাম ১ কোটি ডলার। ২৪ ক্যারেট সোনায় মোড়া এ কলমে রয়েছে সাড়ে সাত হাজার হীরক খণ্ড। অঙ্গসজ্জায় যোগ করেছেন ১০ লাখ ডলার মূল্যের ১৬ ক্যারেটের চুনি। ৭০ লাখ ডলার মূল্যের অলংকার। প্রতিদিন গোসল করেন গোলাপ পানিতে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী খরচ যোগাতে ৫০ লাখ পাউন্ড অনুদান অফার করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম আলোচনার ঝড় তোলেন। দুই দশকে নানা কারণে কেড়েছেন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি।
তিনি আর কেউ নন, আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। বাংলাদেশের বিতর্কিত এক ধনকুবের।
তার লাইফ স্টাইল, আয়-ব্যয় আর জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাত্রায় বিস্মিত দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকও। তিনি কত টাকার মালিক? কী তার অর্থের উৎস? এ কৌতূহল থেকেই এবার মুসা বিন শমসেরের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সোমবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দুদকের উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীকে নিয়োগ করা হয়েছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা।
চলতি বছর ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিন মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশী এ ধনাঢ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীর ৭ বিলিয়ন ডলার আটকে আছে সুইস ব্যাংকে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রত্যাহার করে নিলে মুসা বিন শমসের এতে ৩ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের কথা বলে বাংলাদেশেও আলোচনায় আসেন। রহস্য-বিবরে ঢাকা মুসা বিন শমসেরকে এবার আলোচনায় আনল দুদক।
কে এই মুসা বিন শমসের : মুসা বিন শমসেরের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে। পিতা শমসের আলী মোল্লা ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের স্থানীয় সরকার দফতরের কর্মকর্তা। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আÍীয়তার সূত্রে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুসার ভূমিকা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। মুসার পুত্র ববি হাজ্জাজ (হাজ্জাজ বিন মুসা ববি) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা। এ বছরের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে ববির রহস্যময় রাজনৈতিক তৎপরতা দেশে তাকে পরিচিত করে।
মুসার আরেক পুত্র আজ্জাত বিন মুসা জুবি। মেয়ে জাহারা বিনতে মুসা ন্যান্সি। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পুত্র শেখ ফজলে ফাহিমের কাছে বিয়ে দিয়েছেন ন্যান্সিকে। ববি হাজ্জাজ বিয়ে করেছেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমামকে। জুবির স্ত্রীর নাম সুমী নাসরিন। তারা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
আদম ব্যবসা থেকে অস্ত্র ব্যবসায়ী : একবার মুসা বিন শমসেরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ পাচার সন্দেহে তার অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে সবগুলো তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক একেএম এহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে মুসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হলেও ব্যাংকগুলো তা দিতে পারেনি।
ব্যাংক সূত্র জানায়, মুসা বিন শমসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করার সময় ‘গ্রাহক পরিচিতি’র (কেওয়াইসি) স্থানটি অসম্পূর্ণ রেখেছেন। এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি অর্থ পাচার করেছেন বলে সন্দেহ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য চাইতে গিয়ে মুসার ঠিকানায় লেখে, ‘প্রিন্স মুসা বিন শমসের। পিতা- শমসের আলী মোল্লা, জেলা ফরিদপুর। ব্যবসায়িক ঠিকানা : বাড়ি নম্বর ৫৭, রোড ১, ব্লক ১, বনানী, ঢাকা-১২১৩’।
সূত্র আরও জানায়, সত্তর দশকের মধ্যভাগে মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানির মধ্য দিয়ে মুসার ব্যবসায়িক উত্থান। বিশেষ করে সৌদি আরব ও কাতারে তিনি জনশক্তি রফতানি করেন। শিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকদের তিনি ইতালি পাঠান।
রহস্য আর রহস্য : গত বছর ১৪ নভেম্বর ব্রিটেনের ‘দ্য উইকলি নিউজ’ ‘গোল্ডফিঙ্গারস্?! ম্যান উইথ দ্য মিডাস টাচ ওন্ট জাস্ট রাইট অফ ফ্রোজেন এসেটস’ শীর্ষক প্রতিবেদন ছাপে। এতে মুসার বর্ণাঢ্য জীবনের অনেকখানি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, মুসা যে রোলেক্স ঘড়িটি ব্যবহার করেন তার দাম ৫০ লাখ ডলার। বিশেষ ওই ঘড়ি মাত্র একটিই তৈরি করেছে নির্মাতা কোম্পানি। তার ইউনিক মন্ট বাঙ্ক কলমের দাম ১০ লাখ (সুইস ব্যাংকের তথ্যে এক কোটি) ডলার। অঙ্গসজ্জায় তিনি ব্যবহার করেন ১৬ ক্যারেটের একটি চুনি (বর্বি)- যার দাম ১০ লাখ ডলার। আরও একটি চুনি পরেন ৫০ হাজার ডলারের। এছাড়া পরেন ৫০ হাজার ডলার দামের একটি হীরা ও ১ লাখ ডলার দামের একটি পান্না (এমেরাল্ড)।
মুসার পরিধেয় স্যুটের দাম ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার পাউন্ড। যা শুধু তার জন্য তৈরি হয়। বিশ্বখ্যাত ডিজাইনার প্রিওনি বেলভেস্ট, ইতালির আবলা ও ফ্যান্সিসকো স্মলটো এবং খ্রিস্টিয়ানদের বিশেষ ব্রান্ডের পোশাকে ভর্তি থাকে তার সারি সারি ওয়ারড্রব।
কখনো দেশে এলে রাজধানীর গুলশানের বাড়িতে ওঠেন তিনি। এর সাজসজ্জা চোখ ধাঁধানো। লিভিং রুমসহ ভবনের ছাদ অবধি শোভা পায় দ্যুতিময় অসংখ্য ঝালর। মেঝে মূল্যবান ক্রিস্টাল পাথরে ছাওয়া। ফ্লোরে ঝকঝকে কার্পেট। সব মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নপুরী।
মুসার কত সম্পদ : বিশ্বে মুসার পরিচিতি ধনকুবের হিসেবে। কিন্তু কেউ জানে না কত তার ধনসম্পদ। এমনকি তিনি নিজেও সম্পদের হিসাব জানেন না মর্মে প্রচার রয়েছে। মনে করা হয়, তিনি বাংলাদেশের অন্যতম ধনী।
উইকলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসা বিন শমসের বিপুল ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসা, তেল বাণিজ্য ও ব্রোকারির মাধ্যমে। ‘ড্যাটকো’ নামে জনশক্তি রফতানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। আইরিশ ডেইলি মিররে ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন পেন’ শীর্ষক আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ধর্ষ ছয় দেহরক্ষী ছাড়া তিনি চলাফেরা করেন না। অনলাইনে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, (২০১২ সালের ২৭ জুলাই) মুসা বিন শমসেরের অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৯৯৮ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘সানডে টেলিগ্রাফ’র ১৭ মে সংখ্যায় ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গানস’ শিরোনামে প্রচ্ছদ কাহিনীতে আলোচনায় আসেন মুসা। টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিনিধি নাইজেল ফার্নডেল লিখেন, বিশ্বের প্রথম সারির এ অস্ত্র ব্যবসায়ী পাশ্চাত্য সমাজে ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’ নামে খ্যাত। আন্তর্জাতিক মহলে তিনি ‘প্রিন্স মুসা’ সম্বোধিত হন।
২০১০ সালেও তিনি পশ্চিমা গণমাধ্যমে ঝড় তোলেন সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার ৭ বিলিয়ন ডলার জব্দ করলে। জব্দের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, মুসা বিন শমসেরের লেনদেন অনিয়মিত। আর টাকা উত্তোলন করতে না পারার কারণ তার ১ কোটি ডলার মূল্যের মন্ট বাঙ্ক কলম।
ফ্রান্সে তৈরি ওই কলম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এক পিসই তৈরি করেছিল মুসার জন্য। ২৪ ক্যারেট স্বর্ণে নির্মিত কলমে রয়েছে ৭ হাজার ৫০০ হীরক খণ্ড। ১ কোটি ডলারের বেশি লেনদেনের কোনো ব্যবসায়িক চুক্তিতে মুসা বিন শমসের স্বাক্ষর করেন এ কলম দিয়ে। মুসা বিশ্বাস করেন, এ কলমে যে ব্যবসায় স্বাক্ষর করবেন সেটি সফল হবেই। কলমটি কড়া প্রহরায় রক্ষিত থাকে সুইস ব্যাংকের ভল্টে। যখনই কোনো ব্যবসায়িক কাজে ‘মূল্যবান’ স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয় তখন সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় কলমটি নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট স্থানে। পরে আবার ফেরত নিয়ে আসা হয় ব্যাংকে।
কিন্তু সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কলম আনা-নেয়ায় নিরাপত্তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। কলমটি ভল্ট থেকে তুলতে বাদ সাধায় আর টাকা তুলতে পারেননি তিনি। পরে মুসা জানতে পারেন, শুধু তার কলম নয়- সুইস ব্যাংকে রক্ষিত সব অর্থ-সম্পদই জব্দ করেছে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
২০১০ সালের ৯ নভেম্বর আইরিশ ‘ডেইলি মিরর’-এ প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৭ সালে মুসা তার ইউরোপিয়ান সদর দফতর হিসেবে আয়ারল্যান্ডের কালকিনি দুর্গ কিনতে চেয়েছিলেন। মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, সুইস ব্যাংক তার অর্থ জব্দ করেছে। এ অর্থ তিনি কোথায় পেলেন। এদেশ থেকে পাচার হয়েছে কিনা- এ সন্দেহ থেকেই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত।

To be informed of the latest articles, subscribe:
Comment on this post